জোসেফ.ডব্লিও.এশি , কমান্ডার-ইন-চীফ অফ ইউ-এস স্পেস কমান্ড , মহাকাশ বিষয়ক মাসিক পত্রিকা " Progressive Magazine, January 2000" সংখ্যায় লিখেছেন
"রাজনৈতিক ভাবে বিষয়টি স্পর্শকাতর , কিন্তু তা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে । কিছু মানুষ বিষয়টি নিয়ে শুনতে চায় না এবং বিষয়টি তারা অস্পষ্ট মনে করে। কিন্তু নিশ্চিত-ভাবেই আমরা সবাই মহাকাশে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা মহাকাশ থেকে যুদ্ধ ও মহাকাশে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর তাই আরা (মহাকাশে যুদ্ধের প্রস্তুতি-সরূপ) উচ্চ-শক্তি সম্পন্ন ও মারণাস্ত্র তৈরী করছি। আমরা জাহাজে, বিমানে ও মূলত ভূমি হতে মহাকাশে নিক্ষেপণ-যোগ্য অস্ত্র তৈরীর দিকে মনোযোগী হচ্ছি"[/sb
যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ভূমি, সাগর ও আকাশের পরেই মহাকাশের অবস্থান। প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে একে অপটিমাইজ করা হয়েছে। প্রায় ৯০০ স্যাটেলাইট পৃথিবীর প্রাত্যহিক আবহাওয়া monitoring, অনুসন্ধান এবং তথ্য উদ্ধারে সাহায্য, সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় সনাক্তকরণ ,সামরিক স্থান সনাক্তকরণ ,এর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা , এর তথ্য পাঠানো , সরাসরি সামরিক সাহায্য সহ আরো অনেক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।২৭০টি সামরিক স্যাটেলাইট ও ৬০০টি বেসামরিক স্যাটেলাইট ও আরো বিভিন্ন multi-purpose স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে। অনেক স্যাটেলাইট ক্রমবর্ধমানভাবে ‘dual-use' করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দিয়ে সামরিক এবং বেসামরিক উভয় অপারেশনে ব্যবহার করা যায়।
আমেরিকা সর্বদাই মহাকাশের সর্বাপেক্ষা সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করেছে , যা করার জন্য তারা খুবই আগ্রহী ছিল। অন্যান্য অগ্রসর দেশ ও জাতি এর সুবিধা নেয়ার জন্য সচেতন হচ্ছে , পাশাপাশি নিজেদের জন্য এথেকে উপকারিতা পেতে বিভিন্ন চেষ্টা ও গবেষণা করছে।
মহাকাশের সামরিকিকরন
মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হতেই মহাকাশ নিয়ে মানুষের আগ্রহ শুরু হয়। জার্মানিরা রকেটের উন্নতিসাধন করেছিল যা ছিল ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। বিশ্বযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারন ছিল এরোডাইনামিক্স ও রকেট প্রযুক্তির উচ্চ-শিক্ষা সম্পন্ন গবেষকদের আমেরিকা কর্তৃক অপহরণ ও রাশিয়ার কর্তৃক তাদের মিসাইল চুরি। আমেরিকার সেনাবাহিনী ১৯৪৬ সালে চাঁদ ও এর সঙ্গে radar যোগাযোগ অর্জন , ১৯৫৪সালে Navy কর্তৃক একটি reflector আবিষ্কার এবং সেটি দিয়ে চাঁদের সাথে যোগাযোগ পরীক্ষা শুরু , ১৯৫৯ সালে এটি দিয়ে Hawaii এবং ওয়াশিংটন DCএর মধ্যে একটি তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ১৯৫৭ সালে , রাশিয়া পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছতে সক্ষম প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুৎনিক ১, সফলভাবে চালু করেছিল। যা পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিতর্ক, আন্দোলন ও প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। তারা রাশিয়াকে প্রতিযোগী ভাবতে শুরু করল।
শুরু হল মহাকাশ দখলের প্রতিযোগিতা।
শীতল যুদ্ধের সময় মহাকাশ দখলের প্রতিযোগিতা চুড়ান্ত রূপ নিল। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি Ronald Reagan এর মধ্যে প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল যে ,লেসার কণা অথবা beam প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধাওয়া করতে, আগমনরত শত্রু-রাস্ট্রের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ও একই সাথে আমেরিকাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম একটি shield তৈরী করার কথা। কিন্তু পরবর্তিতে "কৌশলগত প্রতিরোধ প্রবর্তন" অথবা " তারকা Wars " নীতি হিসাবে খ্যাত এই নীতিটি গুরুতর কৌশলগত ঝামেলা , ২৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙ্গে পড়ার কারনে তা বাতিল করা হয়।
পরে আবারো Reagan সরকার থেকে পরবর্তিতে ধারাবাহিকভাবে সকল সরকার মহাকাশে আমেরিকার সামরিক সক্ষমতা সম্প্রসারণ করতে, মহাকাশে অস্ত্র মজুদ করতে ও এই চতুর্থ সামরিক উৎসটিকে আরো dominant করতে আগ্রহী হয়। তারা বিশ্বাস করে নতুন এই সামরিক স্থানটির উপযুক্ত ব্যবহার তাদের আরো উপরস্থ সামরিক সক্ষমতায় পৌছে দেবে।space-based অস্ত্রশস্ত্র তৈরী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম জাতি হিসাবে বিশ্বের বুকে আবির্ভুত হতে চেয়েছিল।
বিভিন্ন দেশগুলোর মহাকাশ নিয়ে কার্যক্রম
২০০৭ জানুয়ারিতে চীনের একটি আবহাওয়া স্যাটেলাইট , পৃথিবীর ৫০০ মাইল উপরে ধ্বংস করতে সক্ষম একটি ground-based medium-range ballistic ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। যথারীতি সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠা শুরু হল। Gordon Johndroe , আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ মুখপাত্র বলল "চীনের মহাকাশ সংক্রান্ত অস্ত্রের উন্নতিসাধন এবং অস্ত্রশস্ত্রের পরীক্ষাকরণ বৈশ্বিক co-operation এর সঙ্গে খাপ-ছাড়া" ।
জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা এ ঘটনা নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল , কারণ এটি ছিল আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মহাকাশ নিয়ে প্রতিযোগিতা করার পর প্রথম উপগ্রহ ধাওয়া/ধ্বংশ করার পরীক্ষা। নতুন প্রতিযোগি মাঠে আসায় অনেকেই অসন্তোষ হল। আমেরিকা চীনকে ভবিষ্যৎতের একটি সম্ভব্য বিপক্ষ/শত্রু হিসাবে বিবেচনা করল ও মহাকাশ dominance এর ক্ষেত্রে বিশাল threat হিসাবে গন্য করল।
১৯৮০ সালের পর হতে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকা বাদে চীনই প্রথম একটি ground-based ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালাল।
অবশ্য চীন এটি গোপনে করেছিল । পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে তারা মহাকাশকে সামরিক উদ্দ্যেশ্যের জন্য স্থান হিসাবে ব্যবহার করাটাকে অবিরামভাবে বিরোধিতা করছিল।চীনের ট্রান্সপারেন্সির অভাব আমেরিকার জন্য এক দুশ্চিন্তার কারন হল। চীনের ব্যাপক ভাবে space-based বিজ্ঞান কর্মসূচী , দিকনির্নয়, telecoms এবং imagery স্যাটেলাইট তৈরী করল। আর স্যাটেলাইটের ‘dual-use এর কারণে কোনটা সামরিক আর কোনটা বেসামরিক স্যাটেলাইট তা বের করা কঠিন হয়ে পড়ে, যা অন্যান্য সবাইকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।
২০০৫ পর্যন্ত, ৪৫ দেশ , যার যার নিজস্ব উপগ্রহ চালু করল। ভারত এবং চীন, মহাকাশ নিয়ে নিজেদের কার্যক্রম দ্রুত বিকশিত করল।
ভারত surveillance করার উদ্দেশ্যে নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রথম সামরিক উপগ্রহ উৎক্ষেপন করে। রাশিয়া, চীন, ভারত, ইজরায়েল, জাপান এবং European.Space.Agency(.ESA) এমন ধরনের সুবিধা চালু করল , যাতে অন্যান্য দেশসমূহ অর্থের বিনিময়ে তাদের সেটেলাইট ব্যবহার করতে পারে।
রাশিয়া এবং চীন , তাদের নিজেদের আসল অস্ত্রশস্ত্রের সংখ্যা ,এর প্রমাণ ও মহাকাশে weaponisation এর বিরোধিতা করে আসছে ধারাবাহিকভাবে। আবার একই সাথে আন্তর্জাতিক মহলে রাশিয়ার সঙ্গে চীন মহাকাশের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নষ্ট করতে একটি আন্তর্জাতিক সন্ধি তৈরি করতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
US Space Command , তাদের নতুন মহাকাশ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলেছেন "‘In this new century, those who effectively utilize space will enjoy added prosperity and security and will hold a substantial advantage over those who do not.'"
নীতিমালায় আরো বলা রয়েছে ""Nations built navies to protect and enhance their commercial interests, by ruling the seas. Now it is time to rule space."
"the use of Army, Navy, and Air Force and Space forces, was set up in 1985 to help institutionalize the use of space explicitly mentions' the US wants to ‘control space to protect its economic interests and establish superiority over the world,
সম্ভাব্য সমাধান
মহাকাশ দখলের এ প্রতিযোগিতার একটি প্রধান কারন হল , বিভিন্ন দেশগুলো তাদের নিজেদের/দেশের স্বার্থের কারনে , রাজনীতির কারনে , বিশ্বের প্রভাব বাড়াতে মহাকাশ ব্যবহার করাটা তাদের অধিকার মনে করে। আমেরিকা সর্বদাই মহাকাশে exploration এবং শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করার এক সার্বিক চুক্তির সমস্ত প্রচেষ্টাতেই veto দিয়েছে। আর তাই জাতিসংঘ ও ব্যার্থ ও হয়েছে। আমেরিকার মত চীন এবং রাশিয়া তাদের জাতীয় আগ্রহকেই প্রথমে রাখে। জাতীয় আগ্রহকে supersede করে এমন কোনো চুক্তিই তারা করতে চায় না ।
ভবিষ্যৎ খিলাফত রাস্ট্র মহাকাশ ব্যবহার করা ও তার exploration ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করার ব্যাপারটিকে এক অনন্য ও ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখবে এবং এর বিষয়ে এক সুনির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করবে। মহাশূন্য এমন একটি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে যেটি কোন জাতি তার মালিকানা দাবি করতে পারেনা , যদিও সকল জাতি এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিশ্বের সাগর এবং সবার সাধারণ সম্পদ/গণমালিকানা সম্পদ যেমন সুয়েজ খাল এবং সিল্ক রুটের (পূর্বের) মতই মহাকাশকে ব্যবহার করতে হবে। পূর্বে এ ধরনের সাধারণ সম্পদ গুলো স্থানীয়ের কর্তৃপক্ষের/রাস্ট্রের অধীনে ছিল এবং একটি ট্যাক্স ধার্য করা ছিল। এ ট্যাক্সের অর্থ দিয়ে সেই সম্পদ গুলো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষন করা হতো।উদাহরন সরূপ বলা যায় , উসমানীয় খিলাফত ভুমধ্যসাগরের পোতাশ্রয় ও বন্দরের উন্নয়নের জন্য ট্যাক্স ধার্য্ করেছিল।
মহাকাশ এমন এক এলাকা, যা সকল দেশের সীমানাকেই অতিক্রম করে। আর তাই মহাকাশকে আমাদের এইডস, ক্যান্সার, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে হবে। ইসলামে গণমালিকানা সম্পদের ব্যবহারে সকল মুসলমানরা সমান হক রয়েছে। কিছু গণমালিকানা সম্পদের উদাহরন হল নদী , খাল, বন , সাগর ও মহাকাশ।তাই এই গণমালিকানা সম্পদে সবার সমান অংশ রয়েছে। গণমালিকানা সম্পদকে কেউ ব্যাক্তিমালিকানায় নিতে পারবেনা।
খিলাফত রাস্ট্র মহাকাশের এই অসীম সম্পদের সুষ্ঠ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে শরীয়াহর দৃষ্টিতে বাধ্য। কারন খিলাফত রাস্ট্র পুঁজিবাদী নীতি তথা self-interest এর দৃষ্টিতে একে দেখবে না। বরং এমন এক দৃষ্টিতে দেখবে , যার ব্যাপারে কাল হাশরের ময়দানে তাদের ( দায়ীত্বশীলদের) প্রশ্ন করা হবে। এ থেকে সঠিক উপযোগিতা আদায় করা-সংক্রান্ত সকল কার্যাবলীর ব্যাপারে দায়ীত্বশীলদেরকে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট জবাবদিহী করতে হবে।
মহাকাশের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ খিলাফত রাস্ট্রের সম্ভাব্য কিছু মৌলিক দৃষ্টিভংগি হল :
১। মহাকাশ এক বিস্তৃত , বিশাল এলাকা , যা কোনো দেশ বা জাতি নিজের বলে দাবি করতে পারে না।
২। মহাকাশের সম্পদ আহরন , এর গবেষণা , উন্নয়নের জন্য সকল জাতিকে একযোগে কাজ করা উচিত।
৩। সুনামি সহ অন্যন্য বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সতর্কতা সংকেত প্রেরণ ও আবহাওয়া গবেষনার উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইটের আরো উন্নতিসাধন।
৪। মহাকাশে অস্ত্র মজুদ ও ব্যাবহারের প্রশ্ন তখনই উঠতে পারে যখন সকল দেশ সমান ভাবে মহাকাশের ব্যাবহার করতে পারছে, নির্দিষ্ট কিছু সুপার-পাওয়ার নয়।
৫। ইসলামের দৃষ্টিতে , গণমালিকানা সম্পদের সঠিক ,উত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করা খিলাফত রাস্ট্রের শরীয়াহ-প্রদত্ত দায়ীত্ব।
৬। রাসুল (সা:) এর হীলফুল ফুযুল এর চুক্তির মতই খিলাফাত রাস্ট্র মহাকাশের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চুক্তি করবে।
বিশ্বের সকল জাতিকে মহাকাশের উত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করার জন্য নিঃস্বার্থভাবে , মুক্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মহাকাশের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সব দেশের গবেষকদের সমানভাবে কাজ করা উচিত।
google webmaster
বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০
মহাকাশ : মানবজাতির চতুর্থ যুদ্ধক্ষেত্র ।
মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১০
এডাম স্মিথ ইসলামী রাস্ট্রের প্রশংসা করেছিলেন
আধুনিক অর্থনীতির জনক বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ ইসলামি রাস্ট্রের দর্শনের প্রশংসা করেছিলেন। তিনি তার বইতে ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা পরিচালিত রাস্ট্র সম্পর্কে লিখেছিলেন যে,
" খলিফা দ্বারা পরিচালিত এটিই বোধহয় প্রথম সাম্রাজ্য , যার সময়ে বিশ্ব প্রশান্তির সেই মাত্রা উপভোগ করেছিল , বিজ্ঞান যেটির প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে । এটি সেই উদার ও প্রজ্ঞাবান নেতার সুরক্ষার অধীনে ছিল , যে (খিলাফাত রাস্ট্র) গ্রীকদের দর্শনবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা সংশোধন করেছিলো এবং তা প্রতিষ্ঠা করেছিল প্রাচ্যে। আধ্যাতিক শান্তির সেই নিবিড় ধারা সমস্ত সাম্রাজ্য জুড়ে পরিবেস্টন করেছিল , যা মানব জাতির মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল এবং স্থাপন করেছিল প্রকৃতির মূল বৈশিষ্টের সাথে এক নিবিড় সংযোগ"
‘History of Astronomy’, The Essays of Adam Smith (London, 1869), p. 353
" খলিফা দ্বারা পরিচালিত এটিই বোধহয় প্রথম সাম্রাজ্য , যার সময়ে বিশ্ব প্রশান্তির সেই মাত্রা উপভোগ করেছিল , বিজ্ঞান যেটির প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে । এটি সেই উদার ও প্রজ্ঞাবান নেতার সুরক্ষার অধীনে ছিল , যে (খিলাফাত রাস্ট্র) গ্রীকদের দর্শনবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা সংশোধন করেছিলো এবং তা প্রতিষ্ঠা করেছিল প্রাচ্যে। আধ্যাতিক শান্তির সেই নিবিড় ধারা সমস্ত সাম্রাজ্য জুড়ে পরিবেস্টন করেছিল , যা মানব জাতির মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল এবং স্থাপন করেছিল প্রকৃতির মূল বৈশিষ্টের সাথে এক নিবিড় সংযোগ"
‘History of Astronomy’, The Essays of Adam Smith (London, 1869), p. 353
রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১০
যাকাতের মূলনীতি ও তার গুরুত্ব
যাকাত একটি আরবী শব্দ , যার অর্থ আশীর্বাদ করা, পবিত্র করা, বৃদ্ধি করা।
আল্লাহ তাআলা কুরআন শরিফে এরশাদ করেছেন "خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً
تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
সাদকাহ গ্রহণ করে তাদের (সম্পদশালীদের) পবিত্র করো [TMQ At-Taubah: ১০৩]
সাদকাহ প্রদান করাকেই যাকাত দেয়া বলা হয়, যা একটি আশীর্বাদ অর্জন , একটি ভাল কাজের চাষাবাদ।
যাকাত হল নির্দিষ্ট ধরনের ও নির্ধারিত সম্পদ থেকে একটি অধিকার । এটি একটি ইবাদত, ইসলামের একটি রুকন বা স্তম্ভ , যা নামায, রোযা রাখার (চাঁদ দেখে )মতই ফরজ। মুসলিমের ওপরই কেবল এ নিয়ম প্রযোজ্য , এবং non-Muslims থেকে গ্রহণ/প্রদান করা হয় না। আল্লাহ তাআলা সালাতের পরেই যাকাতের স্থান দিয়েছেন।যাকাত এর বাধ্যবাধকতা কোরান এবং সুন্নাহ এর অনেক প্রমাণ থেকে প্রতিষ্ঠিত ।
আল্লাহ তাআলা যাকাত-প্রদানকারীদের অত্যন্ত পুরষ্কার দেয়ার কথা বলেছেন।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِم
"নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করে, সৎ কর্ম করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে, তাদেরকে তাদের প্রভুর পক্ষ হতে পুরষ্কার প্রদান করা হবে[TMQ Al-Baqarah: 277].
যাকাত দেয়াকে উপেক্ষা করা , সম্পদের যথেচ্ছা প্রদর্শন করাকে রাসুল (সা:) নিন্দা করেছেন।
আল-আহনাফ বিন এর পক্ষ হতে আবু দার (রা:) বর্ণনা করেছেন যে , রাসুল (সা:) বলেছেন "فقال بشر الكانزين برضف يحمى عليه في نار
جهنم فيوضع على حلمة ثدي أحدهم حتى يخرج
من نغض كتفيه ويوضع على نغض كتفيه حتى
يخرج من حلمة ثدييه يتزلزل"
"সম্পদ জমানোকারীদের জানিয়ে দাও যে , দোজখে একটি পাথর উত্তপ্ত করা হবে এবং সেটিকে তাদের বুকের স্তনের উপর রাখা হবে , যেন তা কাধের হাড়ের উপর দিয়ে বের হয়ে যায় এবং পুনরায় সেটিকে কাধের হাড়ের উপর রাখা হবে , যেন তা বুকের স্তনের উপর দিয়ে বের হয়ে যায় , এভাবে পাথরটিকে উত্তপ্ত ও নাড়ানো হতে থাকবে।Sahih Bukhari Volume 2, Book 24, Number 489]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস গুলো যাকাত প্রদানের গুরুত্ব নির্দেশ করে।বর্তমানে পুঁজিবাদী সমাজে আমরা বসবাস করি, যেখানে প্রচুর টাকা উপার্জন করা , সম্পদের প্রদর্শন এবং নিজের জন্য সম্পূর্ণ টাকা খরচ করাকে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু মুসলমানের কাছে সম্পদ হল একটি আস্থা , একটি বিশ্বাস এবং সেই সম্পদ হতে যাকাত দেয়া হল একটি মহান ও পবিত্র দায়িত্ব , যার জন্য হাশরের ময়দানে তাকে জবাবদিহী করতে হবে।
নিজের ইচ্ছা
যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজের ইচ্ছা বা সেচ্ছায় যাকাত প্রদান। মনের গভীর হতে যাকাত প্রদানের আগ্রহ থাকতে হবে , যেন তা কোনো ধরনের বস্তুগত লেনদেনের বদলে আধ্যাতিক দায়িত্বশীলতার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়। আল্লাহ তাআলার দেয়া ফরজ দায়িত্ব পালন ও তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত যাকাত প্রদান কোনো মুসলামনের কোনো কল্যাণ বয়ে আনবেনা। আর তাই রাসুল বলেছেন "
إنما الأعمال بالنية
"নিশ্চয়ই প্রত্যেক আমল তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল......।"
অন্যান্য সকল ইবাদতের মতই যাকাত দানের ক্ষেত্রে pure devotion থাকা প্রয়োজন এবং তা হতে হবে ব্যক্তিগত বিবেচনা, ব্যক্তির বস্তুগত অর্জন অথবা আকাঙ্খার প্রভাবমুক্ত। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় , হজ্বের সময় পাথর (শয়তানকে) নিক্ষেপ । এই কাজে কোনো ধরনের বস্তগত অর্জন নেই , কারণ তা হচ্ছে শরীয়াহর আদেশ। এ আদেশ পালনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহের কাছে তার প্রকৃত দাসত্ব ও সম্পূর্ণ বাধ্য থাকা প্রকাশ করে।
আর তাই যাকাত প্রদানের সময়ও একমাত্র ও শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টিই আশা করা উচিত , দুনিয়াবি কোনো সুবিধা আশা করা উচিত নয়। রাসুল (সা:) তার উম্মতকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, দ্বিধাহীন আনুগত্য পালনের মাধ্যমেই মুমিন বান্দা আল্লাহ তাআলার প্রতি তার সম্পর্ক প্রকাশ করে।
বান্দার ব্যক্তিগত ইচ্ছা , অনিচ্ছা , আবেগ , নিজস্ব চিন্তা এখানে মূল্যহীন, আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন ও তার সন্তষ্টিই এখানে মূল বিষয়।
কী পরিমাণে ও কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে
যাকাত মুসলিম নর, নারী, শিশুর ওপর দেওয়া হয়। খিলাফত রাস্ট্রের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক , যাকাত প্রদান করতে হবে।
আমরু বিন শোয়াইব বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল (সা:) বলেছেন যে ,
اتجروا في أموال اليتامى، لا تأكلها الزكاة
"নিশ্চয়ই সম্পদের উপর ইয়াতিমের হক আছে , যাকাত প্রদানকারী যেন তা বিনিয়োগ (যাকাত দানের মাধ্যমে) করে, সে যেন যাকাত প্রদান থেকে বিরত না থাকে।
যেসব সম্পদের উপর যাকাত প্রদান করতে হবে, তা হল :-
১। স্বর্ণ , রৌপ্য, প্রচলিত মুদ্রা (টাকা, দিনার ইত্যাদি তরল সম্পদ)
২। গৃহপালিত পশু , যেমন গরু, ভেড়া ও ছাগল
৩।শষ্য ও ফল
৪। ভোগ্য পণ্যের দোকান , যেমন মুদির দোকান , ফাস্ট ফুডের দোকান, কাপড়ের দোকান ইত্যাদি
৫। সম্পত্তি হতে অর্জিত আয় , যেমন উপভাড়া।
স্বর্ণ , রৌপ্য, প্রচলিত মুদ্রা:
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেই যাকাত প্রদান করতে হব। স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ ৮৫ গ্রাম ।বর্তমানে প্রতি গ্রাম স্বর্ণের মূল্য ২৬.১১ পাউন্ড। সেই হিসাবে নিসাব পরিমাণ স্বর্ণের মূল্য (২৬.১১*৮৫) ২২১৯.৩৫ পাউন্ড , যা বর্তমান বাংলাদেশি টাকায় ২৩৭২৮৬.৪২ টাকা (১২ জানুয়ারি, ২০১০)
অর্থাৎ কেউ যদি এক হিজরি বছরের ভিতরে কমপক্ষে উক্ত (২৩৭২৮৬.৪২ টাকার )পরিমাণ স্বর্ণ উপার্জন করে , তাহলে তাকে উক্ত স্বর্ণের ২.৫% অংশ যাকাত হিসাবে প্রদান করতে হবে। আর নিসাব পরিমানের চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হলে সম্পূর্ণ স্বর্ণের মূল্যের উপরই (নিসাবের অংশ সহ) যাকাত দিতে হবে।
আলী বিন আবু তালিব বর্ণনা করেছেন "One-half dinar in every twenty dinars, and one dinar (is due) in every forty dinars"
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হিসাবের ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ , মোট সম্পদ হতে বাদ দিয়ে হিসাব করতে হবে।
উদাহরণ সরূপ বলা যায় যে, কেউ যদি ৫,৭০,০০০ টাকার স্বর্ণের মালিক হয় , আর তার ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ যদি ৫০,০০০ টাকা হয় , তাহলে তাকে ৫,২০,০০০ টাকার স্বর্ণের উপর ২.৫% সম্পদ যাকাত দিতে হবে।
আর তার ঋণ যদি ৪,৫০,০০০ টাকা হতো , তাহলে তাকে কোনো যাকাত দিতে হতোনা , কারণ মোট স্বর্ণ-সম্পদ হতে ব্যক্তিগত ঋণ বাদ (৫,৭০,০০০-৪,৫০,০০০=১,২০,০০০ টাকা) দেয়ার পর অবশিষ্ট স্বর্ণ-সম্পদ , নিসাবের পরিমাণ (২৩৭২৮৬.৪২) হতে কম।
রৌপের ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ ৫৯৫ গ্রাম। এর চেয়ে একটু কম হলে তাকে যাকাত দিতে হবেনা। অর্থাৎ কারো কাছে যদি এক হিজরি বছরে ৫৯৪ গ্রাম রৌপ্য জমা থাকে , তাহলে তাকে উক্ত রৌপের উপর যাকাত দিতে হবেনা।
তরল সম্পদের ক্ষেত্রে (নগদ টাকা, দিনার বা ডলার) সম্পূর্ণ বছরের জমানো পরিমানের উপর ২.৫% অংশ যাকাত দিতে হবে।
গৃহপালিত পশু:
চরানোর উদ্দেশ্যে , এক বছরের অধিক সময় ধরে পালিত পশুর ক্ষেত্রে যাকাত আবশ্যক। যেমন ভেড়া, গরু, ছাগল ইত্যাদি। আর উটের ক্ষেত্রে যদি তার সংখ্যা পাঁচের বেশি হয় , তাহলে তার উপর যাকাত দিতে হবে।
আর প্রতি বছরে পশুর সংখ্যা বাড়লে বছর শেষে সকল পশুর উপর হিসাব করে যাকাত (শতকরা ২.৫ অংশ) দিতে হবে।
শষ্য ও ফলমূল
খেজুর, শুকনো আঙুর, গম, যব ও ভূট্টা ব্যতিত অন্য কোনো শষ্যের উপর যাকাত প্রদান করতে হয় না। এখানেও ফি বছর শষ্যের পরিমাণ বাড়লে নিসাবের মোট পরিমাণ ও বাড়বে।
পন্যদ্রব্য:
ক্রয়-বিক্রয়ের দ্বারা , মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে , এক হিজরি বছর শেষে সংরক্ষিত পন্যদ্রব্য , যার মূল্য স্বর্ণের নিসাবের পরিমাণ হবে , তার উপর যাকাত দিতে হবে।
যাকাত কারা পাবে[/sb
মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে যাকাত প্রদানের জন্য সুস্পষ্ট ভাবে ৮টি (আটটি) খাত উল্লেখ করেছেন। উক্ত খাত ব্যতিত অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করা যাবেনা। মূলত খিলাফত রাস্ট্রই যাকাত সংগ্রহ করে তা আটটি খাতে বরাদ্দ/প্রদান করবে। তবে যেহেতু বর্তমানে খিলাফাত রাস্ট্রের নেই , তাই ব্যাক্তিগত ভাবেই মুসলমানেরা উক্ত খাতগুলোতে যাকাত দিবে।
আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে এরশাদ করেছেন
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ
عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ
وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ
[TMQ At-Taubah: 60].
"নিশ্চ্ই যাকাত হচ্ছে তাদের জন্য যারা গরীব, অভাবি, যারা নিয়োজিত আছে(যাকাত আহরণের জন্য), যাদের মন পরিবর্তন করতে হবে,দাস,ঋণ গ্রহিতা (পরিশোধে অসমর্ধ),যারা আল্লাহর পথে আছে ও অভাবী মুসাফির"
১। গরীব ((Al-Fuqaraa)" : যারা তাদের নিজের উপার্জন দ্বারা নিজেদের নুন্যতম চাহিদা মেটাতে(খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান) অক্ষম , তারাই হল গরীব। তার দারিদ্রতা ও অভাব মেটানো না পর্যন্ত সে যাকাত পাওয়ার যোগ্য।
২।অভাবী (Al-Masakeen) : যে ব্যক্তি কোনো কিছুর মালিক নয়, যে কোনো কাজ করতে পারছেনা , যে তার নিজেকে বা তার পরিবারকে কিছু দিতে পারছেনা তাকে অভাবী বলা হয়। মূলত অভাবীদের স্থান গরীবের নিচে। তারা দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে।
৩। যারা যাকাত আহরনের কাজে নিয়োজিত (Al-Amileen 'alayha):
কুরআনের আদেশ অনুযায়ি , যারা যাকাত আহরণের জন্য ও বরাদ্দের জন্য নিয়োজিত আছে , তারাও যাকাত পাওয়ার যোগ্য , হতেও পারে তারা ধনী। খলিফা তাদের নিয়োগ দিবেন।
আতআব ইয়াসির হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন
لا تحل الصدقة لغني إلا لخمسة لعامل عليها ولرجل
اشتراها بماله أو غارم أو غاز في سبيل الله أو مسكين
تصدق عليه منها فأهدى منها لغني
"Sadaqah is not allowed for the rich except for five: The one employed to collect it, a man who buys it with his wealth, a man who was given a sadaqah and he donated it to his neighbour, the fighter or the debtor."
৪। যাদের মন পরিবর্তন করতে হবে (Al-muallafatu qulubuhum) : সমাজের কিছু মানুষ (নেতা , সাহসী বীর, প্রভাবশালী ব্যাক্তি, গোত্র-প্রধান) যারা এখনো আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেনি , তাদের যাকাত দিতে হবে , যেন তারা পরিবর্তন হয় এবং তাদের পরিবর্তন দ্বারা তাদের পার্শ্ববর্তী মানুষ গুলো যেন পরিবর্তিত হয়ে আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে।
৫। দাস (Ar-riqah) : বর্তমানে যেহেতু আগের মত কেনা দাস এর প্রথা নেই , তাই এটি আর প্রয়োগ হবার সম্ভাবনা নেই। মূলত মনিবের নিকট হতে মুক্ত হবার জন্য দাসকে যাকাত দেয়া হতো।
৬। ঋণ গ্রহিতা (Al-Gharimeen): ঋণ গ্রহিতার যদি সেই রকম সম্পদ না থাকে , যা দিয়ে সে ঋণ শোধ করতে পারে , তবে সে ঋন শোধের নিমিত্তে যাকাত পাবার যোগ্য। তবে অবশ্যই ঋণ নেয়ার উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ হালাল হতে হবে।
আবার একই সাথে যে ব্যক্তি ঋণ প্রদান করেছে , তাকেও যাকাত দিতে হবে , যখন সে তার অর্থ ফেরৎ পাবে। এবং যত বছর অর্থটি ঋণ কার্যে ছিল , তত বছরের হিসাবে যাকাত দিতে হবে।
৭। যারা আল্লাহর পথে আছে (Fi Sabeelillah) : কুরআনের আদেশ অনুযায়ী , জিহাদের ব্যবস্থা করা , তার অর্থায়ন করার জন্য যাকাত প্রদান করতে হবে।
৮। অভাবী মুসাফির (Ibn us-Sabeel) : যে মুসাফির তার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অবশিষ্ট নেই, সে ব্যক্তি যাকাত পাবার যোগ্য।
যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা:
যাকাত প্রদান করা ফরয। আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে এরশাদ করেছেন
وَآتُوا الزَّكَاةَ
"যাকাত প্রদান কর" [TMQ Al-Muzzammil: 20]
মু'আয (রা:) কে রাসুল (সা:) ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন এবং তাকে বলে দিয়েছিলেন "Inform them that Allah obliged Sadaqah upon their wealth that is taken from their rich and given to their poor."
যাকাত না প্রদান করলে আখিরাতে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত , রাসুল (সা:) বলেছেন "No owner of gold or silver who fails to give its due right except that he will have sheets of fire made for him on the Day of Judgement. They will be heated in the Hellfire then used to burn his sides, forehead and back. Whenever they cool, they are reheated to him in a Day which is 50,000 years long, until it is judged between the people and he is shown his path, either to Paradise or to the Fire
যাকাত মূলত রাস্ট্রের কোষাগারে (বায়তুল মাল) জমা হবে , যা হতে রাস্ট্র উক্ত ৮টি খাতে খরচ করা হবে। রাস্ট্রের পক্ষ হতে যাকাত আহরন ও ব্যক্তির পক্ষ হতে যাকাত প্রদান উভয়ই ফরজ। রাস্ট্রে গরীব ,দাস অভাবী ব্যক্তির পরিমাণ বেশি বা কম হোক , যাকাত অবশ্যই আহরণ করতে হবে।
আর ব্যক্তি যাকাত প্রদানকে নামায , রোযা , হজ্বের মতই ফরজ কাজ হিসাবে তা পালন করবে। নির্দিষ্ট খাত ব্যতিত যাকাতে টাকা খরচ করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
উপসংহার
শুধুমাত্র ইসলামি রাস্ট্রই পারে যাকাত-ভিত্তিক একটি বলিষ্ঠ অর্থনীতি গড়তে , যা প্রয়োগ করার আদেশ মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে দিয়েছেন , রাসুল (সা:) ও তার পরবর্তী খলিফারা বাস্তবায়িত করেছিলেন। বিশ্বের ১.৫ বিলিয়ন মুসলামনকে অভাব ,দারিদ্র ও দূর্নীতি হতে মুক্ত করতে পারে একমাত্র যাকাত-ভিত্তিক অর্থনীতি।
আল্লাহ তাআলা কুরআন শরিফে এরশাদ করেছেন "خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً
تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
সাদকাহ গ্রহণ করে তাদের (সম্পদশালীদের) পবিত্র করো [TMQ At-Taubah: ১০৩]
সাদকাহ প্রদান করাকেই যাকাত দেয়া বলা হয়, যা একটি আশীর্বাদ অর্জন , একটি ভাল কাজের চাষাবাদ।
যাকাত হল নির্দিষ্ট ধরনের ও নির্ধারিত সম্পদ থেকে একটি অধিকার । এটি একটি ইবাদত, ইসলামের একটি রুকন বা স্তম্ভ , যা নামায, রোযা রাখার (চাঁদ দেখে )মতই ফরজ। মুসলিমের ওপরই কেবল এ নিয়ম প্রযোজ্য , এবং non-Muslims থেকে গ্রহণ/প্রদান করা হয় না। আল্লাহ তাআলা সালাতের পরেই যাকাতের স্থান দিয়েছেন।যাকাত এর বাধ্যবাধকতা কোরান এবং সুন্নাহ এর অনেক প্রমাণ থেকে প্রতিষ্ঠিত ।
আল্লাহ তাআলা যাকাত-প্রদানকারীদের অত্যন্ত পুরষ্কার দেয়ার কথা বলেছেন।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِم
"নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করে, সৎ কর্ম করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে, তাদেরকে তাদের প্রভুর পক্ষ হতে পুরষ্কার প্রদান করা হবে[TMQ Al-Baqarah: 277].
যাকাত দেয়াকে উপেক্ষা করা , সম্পদের যথেচ্ছা প্রদর্শন করাকে রাসুল (সা:) নিন্দা করেছেন।
আল-আহনাফ বিন এর পক্ষ হতে আবু দার (রা:) বর্ণনা করেছেন যে , রাসুল (সা:) বলেছেন "فقال بشر الكانزين برضف يحمى عليه في نار
جهنم فيوضع على حلمة ثدي أحدهم حتى يخرج
من نغض كتفيه ويوضع على نغض كتفيه حتى
يخرج من حلمة ثدييه يتزلزل"
"সম্পদ জমানোকারীদের জানিয়ে দাও যে , দোজখে একটি পাথর উত্তপ্ত করা হবে এবং সেটিকে তাদের বুকের স্তনের উপর রাখা হবে , যেন তা কাধের হাড়ের উপর দিয়ে বের হয়ে যায় এবং পুনরায় সেটিকে কাধের হাড়ের উপর রাখা হবে , যেন তা বুকের স্তনের উপর দিয়ে বের হয়ে যায় , এভাবে পাথরটিকে উত্তপ্ত ও নাড়ানো হতে থাকবে।Sahih Bukhari Volume 2, Book 24, Number 489]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস গুলো যাকাত প্রদানের গুরুত্ব নির্দেশ করে।বর্তমানে পুঁজিবাদী সমাজে আমরা বসবাস করি, যেখানে প্রচুর টাকা উপার্জন করা , সম্পদের প্রদর্শন এবং নিজের জন্য সম্পূর্ণ টাকা খরচ করাকে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু মুসলমানের কাছে সম্পদ হল একটি আস্থা , একটি বিশ্বাস এবং সেই সম্পদ হতে যাকাত দেয়া হল একটি মহান ও পবিত্র দায়িত্ব , যার জন্য হাশরের ময়দানে তাকে জবাবদিহী করতে হবে।
নিজের ইচ্ছা
যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজের ইচ্ছা বা সেচ্ছায় যাকাত প্রদান। মনের গভীর হতে যাকাত প্রদানের আগ্রহ থাকতে হবে , যেন তা কোনো ধরনের বস্তুগত লেনদেনের বদলে আধ্যাতিক দায়িত্বশীলতার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়। আল্লাহ তাআলার দেয়া ফরজ দায়িত্ব পালন ও তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত যাকাত প্রদান কোনো মুসলামনের কোনো কল্যাণ বয়ে আনবেনা। আর তাই রাসুল বলেছেন "
إنما الأعمال بالنية
"নিশ্চয়ই প্রত্যেক আমল তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল......।"
অন্যান্য সকল ইবাদতের মতই যাকাত দানের ক্ষেত্রে pure devotion থাকা প্রয়োজন এবং তা হতে হবে ব্যক্তিগত বিবেচনা, ব্যক্তির বস্তুগত অর্জন অথবা আকাঙ্খার প্রভাবমুক্ত। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় , হজ্বের সময় পাথর (শয়তানকে) নিক্ষেপ । এই কাজে কোনো ধরনের বস্তগত অর্জন নেই , কারণ তা হচ্ছে শরীয়াহর আদেশ। এ আদেশ পালনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহের কাছে তার প্রকৃত দাসত্ব ও সম্পূর্ণ বাধ্য থাকা প্রকাশ করে।
আর তাই যাকাত প্রদানের সময়ও একমাত্র ও শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টিই আশা করা উচিত , দুনিয়াবি কোনো সুবিধা আশা করা উচিত নয়। রাসুল (সা:) তার উম্মতকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, দ্বিধাহীন আনুগত্য পালনের মাধ্যমেই মুমিন বান্দা আল্লাহ তাআলার প্রতি তার সম্পর্ক প্রকাশ করে।
বান্দার ব্যক্তিগত ইচ্ছা , অনিচ্ছা , আবেগ , নিজস্ব চিন্তা এখানে মূল্যহীন, আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন ও তার সন্তষ্টিই এখানে মূল বিষয়।
কী পরিমাণে ও কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে
যাকাত মুসলিম নর, নারী, শিশুর ওপর দেওয়া হয়। খিলাফত রাস্ট্রের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক , যাকাত প্রদান করতে হবে।
আমরু বিন শোয়াইব বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল (সা:) বলেছেন যে ,
اتجروا في أموال اليتامى، لا تأكلها الزكاة
"নিশ্চয়ই সম্পদের উপর ইয়াতিমের হক আছে , যাকাত প্রদানকারী যেন তা বিনিয়োগ (যাকাত দানের মাধ্যমে) করে, সে যেন যাকাত প্রদান থেকে বিরত না থাকে।
যেসব সম্পদের উপর যাকাত প্রদান করতে হবে, তা হল :-
১। স্বর্ণ , রৌপ্য, প্রচলিত মুদ্রা (টাকা, দিনার ইত্যাদি তরল সম্পদ)
২। গৃহপালিত পশু , যেমন গরু, ভেড়া ও ছাগল
৩।শষ্য ও ফল
৪। ভোগ্য পণ্যের দোকান , যেমন মুদির দোকান , ফাস্ট ফুডের দোকান, কাপড়ের দোকান ইত্যাদি
৫। সম্পত্তি হতে অর্জিত আয় , যেমন উপভাড়া।
স্বর্ণ , রৌপ্য, প্রচলিত মুদ্রা:
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেই যাকাত প্রদান করতে হব। স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ ৮৫ গ্রাম ।বর্তমানে প্রতি গ্রাম স্বর্ণের মূল্য ২৬.১১ পাউন্ড। সেই হিসাবে নিসাব পরিমাণ স্বর্ণের মূল্য (২৬.১১*৮৫) ২২১৯.৩৫ পাউন্ড , যা বর্তমান বাংলাদেশি টাকায় ২৩৭২৮৬.৪২ টাকা (১২ জানুয়ারি, ২০১০)
অর্থাৎ কেউ যদি এক হিজরি বছরের ভিতরে কমপক্ষে উক্ত (২৩৭২৮৬.৪২ টাকার )পরিমাণ স্বর্ণ উপার্জন করে , তাহলে তাকে উক্ত স্বর্ণের ২.৫% অংশ যাকাত হিসাবে প্রদান করতে হবে। আর নিসাব পরিমানের চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হলে সম্পূর্ণ স্বর্ণের মূল্যের উপরই (নিসাবের অংশ সহ) যাকাত দিতে হবে।
আলী বিন আবু তালিব বর্ণনা করেছেন "One-half dinar in every twenty dinars, and one dinar (is due) in every forty dinars"
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হিসাবের ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ , মোট সম্পদ হতে বাদ দিয়ে হিসাব করতে হবে।
উদাহরণ সরূপ বলা যায় যে, কেউ যদি ৫,৭০,০০০ টাকার স্বর্ণের মালিক হয় , আর তার ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ যদি ৫০,০০০ টাকা হয় , তাহলে তাকে ৫,২০,০০০ টাকার স্বর্ণের উপর ২.৫% সম্পদ যাকাত দিতে হবে।
আর তার ঋণ যদি ৪,৫০,০০০ টাকা হতো , তাহলে তাকে কোনো যাকাত দিতে হতোনা , কারণ মোট স্বর্ণ-সম্পদ হতে ব্যক্তিগত ঋণ বাদ (৫,৭০,০০০-৪,৫০,০০০=১,২০,০০০ টাকা) দেয়ার পর অবশিষ্ট স্বর্ণ-সম্পদ , নিসাবের পরিমাণ (২৩৭২৮৬.৪২) হতে কম।
রৌপের ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ ৫৯৫ গ্রাম। এর চেয়ে একটু কম হলে তাকে যাকাত দিতে হবেনা। অর্থাৎ কারো কাছে যদি এক হিজরি বছরে ৫৯৪ গ্রাম রৌপ্য জমা থাকে , তাহলে তাকে উক্ত রৌপের উপর যাকাত দিতে হবেনা।
তরল সম্পদের ক্ষেত্রে (নগদ টাকা, দিনার বা ডলার) সম্পূর্ণ বছরের জমানো পরিমানের উপর ২.৫% অংশ যাকাত দিতে হবে।
গৃহপালিত পশু:
চরানোর উদ্দেশ্যে , এক বছরের অধিক সময় ধরে পালিত পশুর ক্ষেত্রে যাকাত আবশ্যক। যেমন ভেড়া, গরু, ছাগল ইত্যাদি। আর উটের ক্ষেত্রে যদি তার সংখ্যা পাঁচের বেশি হয় , তাহলে তার উপর যাকাত দিতে হবে।
আর প্রতি বছরে পশুর সংখ্যা বাড়লে বছর শেষে সকল পশুর উপর হিসাব করে যাকাত (শতকরা ২.৫ অংশ) দিতে হবে।
শষ্য ও ফলমূল
খেজুর, শুকনো আঙুর, গম, যব ও ভূট্টা ব্যতিত অন্য কোনো শষ্যের উপর যাকাত প্রদান করতে হয় না। এখানেও ফি বছর শষ্যের পরিমাণ বাড়লে নিসাবের মোট পরিমাণ ও বাড়বে।
পন্যদ্রব্য:
ক্রয়-বিক্রয়ের দ্বারা , মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে , এক হিজরি বছর শেষে সংরক্ষিত পন্যদ্রব্য , যার মূল্য স্বর্ণের নিসাবের পরিমাণ হবে , তার উপর যাকাত দিতে হবে।
যাকাত কারা পাবে[/sb
মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে যাকাত প্রদানের জন্য সুস্পষ্ট ভাবে ৮টি (আটটি) খাত উল্লেখ করেছেন। উক্ত খাত ব্যতিত অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করা যাবেনা। মূলত খিলাফত রাস্ট্রই যাকাত সংগ্রহ করে তা আটটি খাতে বরাদ্দ/প্রদান করবে। তবে যেহেতু বর্তমানে খিলাফাত রাস্ট্রের নেই , তাই ব্যাক্তিগত ভাবেই মুসলমানেরা উক্ত খাতগুলোতে যাকাত দিবে।
আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে এরশাদ করেছেন
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ
عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ
وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ
[TMQ At-Taubah: 60].
"নিশ্চ্ই যাকাত হচ্ছে তাদের জন্য যারা গরীব, অভাবি, যারা নিয়োজিত আছে(যাকাত আহরণের জন্য), যাদের মন পরিবর্তন করতে হবে,দাস,ঋণ গ্রহিতা (পরিশোধে অসমর্ধ),যারা আল্লাহর পথে আছে ও অভাবী মুসাফির"
১। গরীব ((Al-Fuqaraa)" : যারা তাদের নিজের উপার্জন দ্বারা নিজেদের নুন্যতম চাহিদা মেটাতে(খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান) অক্ষম , তারাই হল গরীব। তার দারিদ্রতা ও অভাব মেটানো না পর্যন্ত সে যাকাত পাওয়ার যোগ্য।
২।অভাবী (Al-Masakeen) : যে ব্যক্তি কোনো কিছুর মালিক নয়, যে কোনো কাজ করতে পারছেনা , যে তার নিজেকে বা তার পরিবারকে কিছু দিতে পারছেনা তাকে অভাবী বলা হয়। মূলত অভাবীদের স্থান গরীবের নিচে। তারা দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে।
৩। যারা যাকাত আহরনের কাজে নিয়োজিত (Al-Amileen 'alayha):
কুরআনের আদেশ অনুযায়ি , যারা যাকাত আহরণের জন্য ও বরাদ্দের জন্য নিয়োজিত আছে , তারাও যাকাত পাওয়ার যোগ্য , হতেও পারে তারা ধনী। খলিফা তাদের নিয়োগ দিবেন।
আতআব ইয়াসির হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন
لا تحل الصدقة لغني إلا لخمسة لعامل عليها ولرجل
اشتراها بماله أو غارم أو غاز في سبيل الله أو مسكين
تصدق عليه منها فأهدى منها لغني
"Sadaqah is not allowed for the rich except for five: The one employed to collect it, a man who buys it with his wealth, a man who was given a sadaqah and he donated it to his neighbour, the fighter or the debtor."
৪। যাদের মন পরিবর্তন করতে হবে (Al-muallafatu qulubuhum) : সমাজের কিছু মানুষ (নেতা , সাহসী বীর, প্রভাবশালী ব্যাক্তি, গোত্র-প্রধান) যারা এখনো আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেনি , তাদের যাকাত দিতে হবে , যেন তারা পরিবর্তন হয় এবং তাদের পরিবর্তন দ্বারা তাদের পার্শ্ববর্তী মানুষ গুলো যেন পরিবর্তিত হয়ে আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে।
৫। দাস (Ar-riqah) : বর্তমানে যেহেতু আগের মত কেনা দাস এর প্রথা নেই , তাই এটি আর প্রয়োগ হবার সম্ভাবনা নেই। মূলত মনিবের নিকট হতে মুক্ত হবার জন্য দাসকে যাকাত দেয়া হতো।
৬। ঋণ গ্রহিতা (Al-Gharimeen): ঋণ গ্রহিতার যদি সেই রকম সম্পদ না থাকে , যা দিয়ে সে ঋণ শোধ করতে পারে , তবে সে ঋন শোধের নিমিত্তে যাকাত পাবার যোগ্য। তবে অবশ্যই ঋণ নেয়ার উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ হালাল হতে হবে।
আবার একই সাথে যে ব্যক্তি ঋণ প্রদান করেছে , তাকেও যাকাত দিতে হবে , যখন সে তার অর্থ ফেরৎ পাবে। এবং যত বছর অর্থটি ঋণ কার্যে ছিল , তত বছরের হিসাবে যাকাত দিতে হবে।
৭। যারা আল্লাহর পথে আছে (Fi Sabeelillah) : কুরআনের আদেশ অনুযায়ী , জিহাদের ব্যবস্থা করা , তার অর্থায়ন করার জন্য যাকাত প্রদান করতে হবে।
৮। অভাবী মুসাফির (Ibn us-Sabeel) : যে মুসাফির তার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অবশিষ্ট নেই, সে ব্যক্তি যাকাত পাবার যোগ্য।
যাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা:
যাকাত প্রদান করা ফরয। আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে এরশাদ করেছেন
وَآتُوا الزَّكَاةَ
"যাকাত প্রদান কর" [TMQ Al-Muzzammil: 20]
মু'আয (রা:) কে রাসুল (সা:) ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন এবং তাকে বলে দিয়েছিলেন "Inform them that Allah obliged Sadaqah upon their wealth that is taken from their rich and given to their poor."
যাকাত না প্রদান করলে আখিরাতে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত , রাসুল (সা:) বলেছেন "No owner of gold or silver who fails to give its due right except that he will have sheets of fire made for him on the Day of Judgement. They will be heated in the Hellfire then used to burn his sides, forehead and back. Whenever they cool, they are reheated to him in a Day which is 50,000 years long, until it is judged between the people and he is shown his path, either to Paradise or to the Fire
যাকাত মূলত রাস্ট্রের কোষাগারে (বায়তুল মাল) জমা হবে , যা হতে রাস্ট্র উক্ত ৮টি খাতে খরচ করা হবে। রাস্ট্রের পক্ষ হতে যাকাত আহরন ও ব্যক্তির পক্ষ হতে যাকাত প্রদান উভয়ই ফরজ। রাস্ট্রে গরীব ,দাস অভাবী ব্যক্তির পরিমাণ বেশি বা কম হোক , যাকাত অবশ্যই আহরণ করতে হবে।
আর ব্যক্তি যাকাত প্রদানকে নামায , রোযা , হজ্বের মতই ফরজ কাজ হিসাবে তা পালন করবে। নির্দিষ্ট খাত ব্যতিত যাকাতে টাকা খরচ করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
উপসংহার
শুধুমাত্র ইসলামি রাস্ট্রই পারে যাকাত-ভিত্তিক একটি বলিষ্ঠ অর্থনীতি গড়তে , যা প্রয়োগ করার আদেশ মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে দিয়েছেন , রাসুল (সা:) ও তার পরবর্তী খলিফারা বাস্তবায়িত করেছিলেন। বিশ্বের ১.৫ বিলিয়ন মুসলামনকে অভাব ,দারিদ্র ও দূর্নীতি হতে মুক্ত করতে পারে একমাত্র যাকাত-ভিত্তিক অর্থনীতি।
সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০
চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের অবসান হোক
আসসালামুআলাইকুম,
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/allwin_1283398992_2-moon-sighting.png]
আশা করি সবাই ভালো আছেন।রমজানের এই দিনে সবাই আল্লাহর আদেশে , তার করুনা লাভের আশায় রোযা রাখছেন। আল্লাহ আপনাদের সাহায্য করবেন, ইনসাল্লাহ।
এই ব্লগে আমি ইসলামের আলোকে চাঁদ দেখার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে , বিভিন্ন এলাকায় , এমনকি বিভিন্ন শহরেও আলাদা ও ভিন্ন সময়ে রোযা শুরু হয়, ঈদ পালন করা হয়। কিন্তু ইসলামের আলোকে তা শরিআহ বিরোধি। ইসলামি শরিআর নিয়মে একই দিনে (তারিখে) সকল দেশের মুসলমান রোযা শুরু করবে ও রোযা শেষ করবে ও ঈদ পালন করবে।
এখানে আমি শরিআর নিয়ম , কোরআনের আয়াত ,হাদিস , মাযহাব ও রাসুল (সা:) এর বিভিন্ন ঘটনা বর্ননা করবো, যা থেকে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে একই দিনে (তারিখে) রোযা রাখা , রোযা শেষ করা , ঈদ পালন ও অন্যান্য সব ধর্মীয় অনুশাসন পালন করার ব্যাপারে সব মুসলমানের জন্য একই তারিখ ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতার/ফরজ হওয়ার বিষয়টি পরিস্কার হবে। এখানে আমি হাদিস ও রেফারেন্স গুলো ইংরেজিতে লিখেছি। সম্মানিত পাঠকগন একটু কষ্ট করে বুঝে নিবেন। এটা আমার প্রথম ব্লগ তাই শব্দগত বা বানানের ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করছি। আর মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বলে রাখি কেউ আমাকে নোয়াখালি , ভোলা বা বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোযা ও ঈদ পালনকারিদের প্রতিনিধি হিসাবে গন্য করবেন না। আমি এখানে শরিআহর আলোকে ও ইসলামের সত্য ও সঠিক ইতিহাসের আলোকেই বিষয়টি বিশ্লেষন করবো।
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/allwin_1283367017_1-moon6.jpg]
এবার মূল আলোচনায় আসি।
আল্লাহ তাআলা কুরআন শরিফের সুরা বাকারাহ এর ১৮৯ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ مَنِ" "اتَّقَى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ظُهُورِهَا وَلَكِنَّ الْبِرَّ
“They ask you about the crescents. Say: They are but signs to mark fixed periods of time in the affairs of men and for pilgrimage.” [TMQ 2:189]
তিনি আরো এরশাদ করেছেন
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
“Whoever witnesses the crescent of the month, he must fast the month." [TMQ 2:185]
উপরোক্ত আয়াত দুটিতে CRESCENT শব্দটি বলা হয়েছে, যার সাথে রোযা শুরু ও অন্যান্য সকল ধর্মীয় কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়া আছে। CRESCENT শব্দের অর্থ অমাবশ্যা পরবর্তী নতুন চাঁদ , যা পৃথিবীতে প্রথম বার ও একবারই দেখা যায় , সেটা যে কোনো দেশ হতে দেখা যাক না কেন। সেটা হতে পারে ( বিশ্বের যে কোনো স্থান) মালয়শিয়া , আমেরিকা , সুদান বা বাংলাদেশের পটুয়াখালি জেলার দশমিনা উপজেলায়। একবার পৃথিবীর আকাশে নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরেরদিন তা আর CRESCENT চাঁদ থাকেনা ।
পরের আয়াতের Whoever শব্দ , যা সকল বিশ্বাসি মুসলমানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে , অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসুলকে বিশ্বাসী মুসলমানের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াত দুটি দ্বারা এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে , নতুন চাঁদ দেখে সকল মুসলমানের উপর হজ্ব ( pilgrimage) বা রোযা শুরু করা ফরজ ।
সহীহ হাদিস বুখারি ও মুসলিম শরিফ হতে বর্নিত আছে যে,
Bukhari and Muslim reported on the authority of Abdullah Ibnu Omar (may Allah be pleased with them) that the Messenger of Allah (saw) mentioned Ramadhan and said: "Do not fast till you see the new moon, and do not break fast till you see it; but if the weather is cloudy complete it (thirty days)."
যার অর্থ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন " রাসুল (সা:) বলেছেন , তোমরা নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রেখনা ,নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা ভংগ করোনা এবং বৃষ্টি বা আবহাওয়ার কারনে চাঁদ না দেখা না গেলে ত্রিশ রোযা পুর্ণ কর।
"Do not fast till you see it and do not break fast till you see it." - "Do fast when you it is sighted and break fast when it is sighted."
উপরক্ত বাক্যে Do not fast ও Do fast একটি Plural form , যা কিনা (আরবি ভাযায়) সব মুসলমানের জন্য একই সাথে আদেশ হিসাবে প্রযোজ্য ।
এখানে পাঠককে একটি বিষয় জানিয়ে রাখি যে , [sb]যে আরবি ভাষার অর্থ বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষিতে ও প্রয়োগের উপর উপর নির্ভর করে , শাব্দিক অনুবাদের উপর নয়[/sb]।
মুসলিম শরিফ হতে আরো বর্নিত , আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন " রাসুল (সা:) বলেছেন ,
"The month is thus and thus. (He then withdrew His thumb at the third time indicating 29). He then said: Fast when you see it, and break your fast when you see it, and if the weather is cloudy do calculate it (the months of Shaban and Shawwal) as thirty days."
বুখারি শরিফ হতে বর্নিত , ইবনে উমর বলেছেন রাসুল (সা:) বলেছেন "The month consists of 29 nights, so do not fast till you have sighted it (i.e. the new moon), and if the weather were cloudy, then complete it as thirty days."
মুসলিম শরিফ হতে আরো বর্নিত , আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন " রাসুল (সা:) বলেছেন ,
“The month of Ramadan may consist of twenty-nine days; so when you see the new moon observe fast and when you see (the new moon again at the commencement of the month of Shawwal) then break it, and if the sky is cloudy for you, then calculate it (and complete thirty days)."
উপরক্ত হাদিস গুলোর বক্তব্য পরিস্কার ও সহীহ এবং আমরা জানি যে মুসলিম ও বুখারি শরিফ ছয়টি সহীহ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং উপরোক্ত হাদিসের (সুন্নাহ) নির্দেশগুলো দ্বারা সুস্পস্ট ভাবে বলা হয়েছে যে , নতুন চাঁদ দেখা মাত্র সকল মুসলমানের উপর সময় অনুযায়ি আমল করতে হবে।
কোথাও কোনো হাদিসে বলা নেই যে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে যখন চাঁদ দেখবে , সে বা সেই এলাকার মানুষ রোযা তখন রোযা শুরু করবে।
আবু দাউদ ও হাকিম হতে আরো বর্নিত , ইবনে উমার বলেছেন "During the time of the Prophet (saas), the companions went looking for the new crescent. So I told the Prophet (saw) that I saw it. So he fasted and told the companions to fast."
উপরোক্ত হাদিস এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে , রাসুল (সা:) নিজে চাঁদ না দেখলেও তার সাহাবিদের কথায় বিশ্বাস করে রোযা শুরু করেছিলেন । এবং একই সাথে "told the companions to fast." দ্বারা সবার প্রতি রোযা শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তিনি এই নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালিন রাস্ট্রের প্রধান হিসাবে। অর্থাৎ খলিফা চাঁদ দেখতে পাওয়ার বিষয়টি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে নিজ দায়িত্বে জানাবেন এবং পরবর্তী আমল করার নির্দেশ দিবেন।
এবার মাযহাবের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করবো। (মাযহাব কি বিষয় তা আশা করি সকল পাঠক জানেন। কেউ না জানলে মসজিদের ঈমামকে প্রশ্ন করে জেনে নিবেন ) আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়ায় হানাফি মাযহাবের অনুসারির সংখ্যা বেশি। Imam Juzair হানাফি মাযহাবের সুত্রানুসারে তার Fiqh al Madhahib al Arba’a (The Fiqh of the four schools of thought) Volume 1 বইতে উল্লেখ করেছেন যে,
1) The sighting of the moon by any Muslim should be accepted whether slave, free, man or woman without inquiring whether they are just or not, 2) The justness should be verified by a Qadi.
Darra-Mukhtar তার Darra-Mukhtar, (Volume 1, page 149) বইতে উল্লেখ করেছেন যে, "If people living in the West sight the moon, it becomes obligatory for the people living in the East to act on that.
মাওলানা আহমেদ রেজা খান , তার Fatawa Rizwi (Vol 4 page 568, Urdu edition]) বইতে উল্লেখ করেছেন “In the correct and authentic mazhab of our Imams, with regard to the sighting of moon for Ramdhan and eid, distance of the place of sighting is of no consideration. The sighting of the east is binding upon west and vice versa i.e. the sighting of west is similarly binding on east.”
Dar al-Uloom Deoband এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা Maulana Rasheed Ahmad Gangohi বলেছেন If the people of Calcutta sighted the moon in Friday, whereas it was sighted in Makkah on Thursday itself, but the people of Calcutta did not know of it (the sighting on Thursday); then whenever they come to know of this, it will be obligatory for them to celebrate eid with the people of Makkah and make up (Qada’) for the first fasting.” [Maulana Rasheed Ahmad Gangohi, Sharh Tirmizi (Explanation of Tirmizi), Kaukab un Durri, pg 336 Urdu edition].
এবার উপরোক্ত সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কিছু টেকনিকাল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যাতে করে সমগ্র বিষয়ে আরো পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায় এবং কোনো দ্বিধা-দ্বন্দের অবকাশ না থাকে।
ধরা যাক, মরক্কোর রাবাতে শুক্র বারে চাঁদ দেখা গেল।এক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার মুসলমানের (একই সাথে বিশ্বের সকল মুসলমানের) উপর রাবাতে দেখা শুক্রবারের চাঁদের উপর ভিত্তি করে রোযা ,হজ্ব ও অন্যান্য ধর্মীয় কাজ পালন করা ফরজ , যদিও বা হতে পারে ইন্দোনেশিয়ায় শুক্র বারে চাঁদ দেখা যায়নি , শনিবারে চাঁদ দেখা গেছে।
আর আগে থেকেই ইন্দোনেশিয়ায় তথা বিশ্বের সব মুসলমান শুক্রবারে চাঁদ দেখার জন্য বা চাঁদ দেখতে পাওয়ার খবরের জন্য অপেক্ষা করবে , বিশ্বের কোথাও শুক্রবারে চাঁদ না দেখা শনিবারে দেখা চাঁদের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী আমল করবে।
আর যদি কোনো কারনে শুক্রবারের চাঁদ দেখার সংবাদ ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানেরা না পায় , এবং শনিবারে দুপুরে রোযা রাখা অবস্থায় পায় , সেক্ষেত্রে তাদের তাৎক্ষনিক ভাবে রোযা ভংগ করতে হবে এবং ঈদের নামাযটি রবিবারে সকালে পড়ে নিতে হবে। আর যদি শনিবার সকাল বেলা সংবাদটি পায় , তাহলে সকালেই রোযা ভংগ করে ঈদের নামায পরে নিতে হবে ও শনিবারেই ঈদ পালন করতে হবে (যদি তা শাওআল মাসের চাঁদ দেখার বিষয় হয়)।
যা নিম্নোক্ত হাদিসেই বলা হয়েছে
Abu ‘Umayr ibn Anas reported from his paternal uncles among the Ansaar who said: “It was cloudy and we could not see the new moon of Shawwaal, so we started the day fasting, then a caravan came at the end of the day and told the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) that they had seen the new moon of Shawwaal the day before, so he told the people to stop fasting, and they went out to pray the Eid prayer the next day.” [Reported by the five. It is sahih; al-Irwaa’, 3/102, Abu Dawud 1153]
তার পরেও যদি কোনোও কারনে চাঁদ দেখার সংবাদ ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানেরা শনিবারেও না পায়, সেক্ষেত্রে তারা ঈদের পরদিন একটি রোযা রাখবে , যেহেতু তারা ১টি রোযা কম রেখেছে।
আর রোযা শুরুর ক্ষেত্রে যদি এ রকম হয় যে,শুক্রবারের চাঁদ দেখার সংবাদ ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানেরা শনিবারে রোযা না রাখা অবস্থায় পায় , সেক্ষেত্রে তাদের তাৎক্ষনিক ভাবে রোযা শুরু করতে হবে। আবু দাউদ শরিফেরএই হাদিসটি দ্বারা বিষয়টি পরিস্কার হবে।
The famous Hanafi scholar Imam Sarkhasi (died 483 A.H.) in Al-Mabsoot quotes the narration from Abu Dawud (2333, 2334) that the Muslims did not begin fasting since they did not see the moon. Then a man, from out of Madinah, came and told the Prophet (saaw) that he had seen it (the moon). The Prophet (saaw) asked him if he was a Muslim to which the man answered in the affirmative. The Prophet (saaw) then said: “Allahu-Akbar! one is enough for all Muslims” The Prophet (saaw) fasted and asked the people to stop eating and start fasting. [Al-Mabsout by Imam Sarkhasi; 3-52]
তবে বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে, Crescent Moon অর্থাৎ অমাবশ্যা পরবর্তি প্রথমবার ওঠা চাঁদটি পূর্ব ইউরোপ , মধ্য প্রাচ্য ,পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকাতে বেশি দেখা যায়। আর তাই বেশির ভাগ সময়ই সৌদি আরব আমাদের চেয়ে একদিন আগে রোযা শুরু বা ঈদ পালন করে। যা নিতান্তই ভুল ও শরিআহ বিরোধি।
এখানে উল্লেক্ষ্য যে , চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে পৃথিবীর দূরতম দুটি বিন্দুর বা স্থানের সময়ের পার্থক্য বারো ঘন্টার বেশি হয়না। অর্থাৎ উপরে উল্লেখিত উদাহরণ অনুযায়ী ,মরক্কোর কোনো মুসলমান চাঁদ যদি শুক্রবারে সন্ধায় চাঁদ দেখে , তবে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমনেরা বড়জোর রাত দুইটা বা তিনটায় সংবাদ পাবে, অর্থাৎ সেহরি শুরু করা বা রোযা না রাখার ব্যাপারে Preparation নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এখানে একটি কথা বলাই বাহুল্য যে , সকল মুসলমান (উপরোক্ত উদাহরন অনুযায়ী) শুক্রবারের সন্ধায় চাঁদ দেখার জন্য বা তা দেখার সংবাদ শোনার জন্য অপেক্ষা করবে। কোথাও চাঁদ না দেখা গেলে শনিবারে দেখা চাঁদের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তি আমল করবে।অর্থাৎ রোযা শুরুর দিনের ক্ষেত্রে ভেরিয়েশন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের সময়ের ভিন্নতার কারনে আমলের সময়ের ভিন্নতা হবার সম্ভাবনা নেই। আর তাই আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন
"And eat and drink until the white thread of dawn appears to you distinct from its black thread; Then complete your fast until the night appears" [TMQ 2:187]
উপরোক্ত আয়াত সব মুসলমানকে উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছে , আলাদা ভাবে Area based Segment করা হয়নি।
এখানে একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় উল্লেখ্য যে, যেহেতু বর্তমান বিশ্বে ইসলামি শরীয়াহ পরিচালিত রাস্ট্রের উপস্থিতি অবর্তমান , সেহেতু যখনই এ বিষয়টি নিশ্চিত হবে যে , বিশ্বের কোথাও চাঁদ দেখা গেছে , তাৎক্ষনিক ভাবে সেই সংবাদের ভিত্তি করে পরবর্তি আমল করা সকল মুসলমানের উপর ফরজ । এখানে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের চাঁদ দেখা কমিটির মিটিং এর সিদ্বান্ত বা মধ্য প্রাচ্যের কোনো দেশের সাথে মিল রেখে আমল করা শরীয়াহ বিরোধী।
সাদ বিন মুয়াদ বর্ননা করেছেন যে ,I said: O Messenger of Allah. What do you think if we had leaders who do not follow your Sunnah and do not adopt your order; in what do you order regarding their affair? The Messenger of Allah (saw) said: There is no obedience to the one who does not obey Allah 'azza wa jall.'
একটি হাদিস আছে ,যার কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আলাদা সময়ে রোযা পালনের প্রশ্ন ওঠে। হাদিসটি নিম্নরূপ
narration reported by Muslim on the authority of Kurayb who reported that Umm-ul-Fadhl Bintu-l-Harith sent him to Mu'awiya in Al-Sham; he said: “I arrived in Al-Sham and did business for her (Umm-ul-Fadhl Bintu-l-Harith). It was there in Al-Sham that the month of Ramadhan commenced. I saw the new moon of Ramadhan on Friday. I then came back to Madina at the end of the month, Abdullah Ibnu Abbas (R) asked me about the new moon of Ramadhan and said: "When did you see it? I said: We saw it on the night of Friday, He said: Did you see it yourself? I said: Yes, and the people also saw it and observed the fast and Mu'awiya also observed the fast; whereupon he said: But we saw it on Saturday night. Some would continue to observe fast till we complete thirty (fasts) or we see it (the new moon of Shawwal). I said: Is the sighting of the moon by Mu'awiya not valid for you? He said: No, this is how the Messenger of Allah (saw) has commanded us."
যারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আলাদা সময়ে রোযা পালনের কথা বলে তারা এই হাদিসটির কথা বলে। মূলত , এটি একটি ইজতিহাদ , কোনো হাদিস নয়। উপরন্তু এই হাদিসটি সহীহ হওয়ার যথাযথ নিয়ম পালন করেনি। আর ইজতিহাদ সবসময় শরীআর নিয়ম ও কুরআনের আয়াত দ্বারা সিদ্ব হতে হবে , যা উপরোক্ত ইজতিহাদের বেলায় হয়নি।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে , বর্তমানে তো সারা বিশ্বেই ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ পালন হচ্ছে। এক্ষেত্রে কি করতে হবে তাও রাসুল (সা:) বলে দিয়েছেন, যা নিম্নরুপ ,Al-Bukhari narrated about Bisr ibn Obaydellah al-Hadhrami that he heard Abu Idrees al-Khoolani say that he heard Huthaifah ibn al-Yaman saying: "The people used to ask the Prophet of Allah (saw) about the good and I used to ask him about the bad in fear that it might catch me. So I said: O Prophet of Allah! We were in times of jahilliyah and mischief then Allah brought us this good, so is there any mischief after this good? He (saw) said: Yes. I said: Will there be any good after that mischief? He said: Yes, and it has smoke. I said: What is its smoke? He said: (Some) people guide without any guidance, you recognise some (from them) and deny some. I said: Will there be a mischief after that good? He said: Yes, (some) people who invite at the doors of hell, whoever accepted their invitation they throw him in it (hell). I said: O Prophet of Allah, describe them to us. He said: They are of our own skin (of our people) and talk our language. I said: What do you order me to do if that (matter) caught me? He said: Adhere to the jama'ah of Muslims and their Imam. I said: What if the Muslims have no jama'ah nor an Imam? He said: Then you abandon all those groups, even if you have to grab with your teeth the trunk of a tree till death comes to you as such."
প্রশ্ন উঠতে পারে যে , কবে থেকে এই আলাদা ভাবে রোযা ও ঈদ পালন শুরু হয়েছে ?
উত্তর হচ্ছে এই যে , ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মুসলিম পরাশক্তির ধ্বংস হওয়ার পর হতেই বিভিন্ন মুসলিম দেশ গুলোতে আলাদা দিনে রোযা ও ঈদ পালন শুরু হয়েছে। এবং একই সাথে ফরজ অমান্য করা হয়েছে।
আর ১৯৭১ সালের পূর্বে তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানে একই দিনে নাকি আলাদা দিনে রোযা শুরু ও ঈদ পালন করা হতো , সেই বিষয়টি পাঠক নিজ উদ্যোগে ইচ্ছা করলে জেনে নিতে পারেন বাবা , নানা অথবা বয়োজোষ্ঠ কারো কাছ হতে।
মূলত রাসুল (সা:) এর সময় ও তার পরবর্তি ইসলামি রাস্ট্রের খলিফাগণ চাঁদ দেখে (মুসলিম বিশ্বের যে কোনো স্থান হতে যে কোনো একজন বিশ্বাসী মুসলমানের দেখা) একই তারিখে শরিআহ অনুযায়ী কর্মকান্ড (রোযা শুরু, ঈদ পালন )চালু রেখেছিলেন শত শত বছর ধরে , কারন ইহা ছিল একটি ফরজ কাজ। প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে তারা একই দিনে কাজটি করত ? তারা যেটি করত , তা হল মুসলমানরা বিভিন্ন পাহাড়ের উপরে মশাল বা আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করতো। যেই এলাকায় প্রথম চাঁদ দেখা যেত , সেই এলাকার পাহাড়ের উপরে মশাল বা আগুন জ্বালানো হতো। সেই আগুন দেখে দূরবর্তি পাহাড়ও আগুন জ্বালানো হতো। এভাবে ধীরে ধীরে সকল এলাকায় , সব মুসলমান আগুন জ্বালানো দেখে চাঁদ দেখার খবর পেত। তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে (Mobile , Internet , Live telecast বা Twitter , Facebook, IM এর ব্যবহার !!!!!! ) আগুন জ্বালানোর আদৌ প্রয়োজন আছে কি না তা প্রযুক্তি সচেতন পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন।
তার মানে দাড়াচ্ছে ,Information gap হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরেও যদি কোনোও কারনে Information gap হয়ই , সেক্ষেত্রে Formal Procedure হল ,প্রথমবার চাঁদ দেখা ব্যক্তি (আল্লাহ ও তার রাসুলের উপর বিশ্বাসি ) যদি পুরুষ হয় , তবে তা ইসলামি রাস্ট্রের কাজীর মাধ্যমে তা খলিফার কাছে পৌছবে এবং খলিফা নিজ দায়িত্বে সমগ্র উম্মাহকে তা জানাবেন। আর প্রথমবার চাঁদ দেখা ব্যক্তি মুসলমান মহিলা হলে আলাদা ভাবে একজন পুরুষের সাক্ষি লাগবে।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে প্রায় চলে এসেছি। সম্ভাব্য সকল বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কোনো প্রশ্ন থাকলে করবেন। উত্তর দিতে চেস্টা করব, ইনসাল্লাহ।
রাসুল (সা:) বলেছেন
"Whoever speaks about the Qur'an without knowledge, then let him prepare for himself his seat in the fire." [Tirmidhi, Ahmad, Nisai & Ibn Jarir]
সম্মানিত Pragmatic পাঠকগণ , মুসলমান হিসাবে চাঁদ দেখা-পরবর্তী করনীয় ফরজ কর্তব্য পালন করুন , উপরোক্ত বিষয়টি আপনার প্রিয়জনের সাথে আলোচনা করুন। এখন থেকে পরবর্তীতে সারা জীবন , যখন চাঁদ দেখবেন/দেখার সংবাদ শুনবেন , তখনই চাঁদ দেখা-পরবর্তী আমল পালন করুন। আমাদের Emotions, public opinion, the view of the majority, norms, customs, What people will say !!, shyness এগুলো এখানে কোনো ফ্যাক্টর নয়।
মুসলিম শরিফ হতে বর্নিত আছে যে, আবু হুরায়রা বলেছেন “The Messenger of Allah (saw) forbade fasting on two days, the day of al-Adha and the day of al-Fitr”
আল্লাহ তাআলা এক, কুরআন এক, রাসুল (সা:) এক, আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মও এক। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ইসলামের সত্য ও সঠিক বাণি জানার ও প্রয়োগের তৌফিক দান করুন এবং কাল কিয়ামতের দিবসে তার অপার করুণায় আমাদের বেহেশত দান করুন।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)